প্রত্যাবর্তন

- কেমন আছো...?
আজ প্রায় তিন বছর পরে ইশার সাথে দেখা, অফিশিয়াল কাজে রাতেই কক্সবাজার যেতে হবে,  হানিফ পরিবহনে টিকেট বুক দিয়ে বাসে উঠে পাশের সিটে দেখি ইশাকে, প্রথম দিকে বাসের ভিতরের মৃদুআলোয় খেয়াল করা হয়নি। সে'ই প্রথম দেখেছিলো আর তার কেমন আছো জানতে চাওয়ার বদৌলতে আমার তাকে দেখা। আজ প্রায় তিন বছর পর দুজনে মুখামুখি।  শেষ দেখা হয়েছিলো সেদিন যেদিন ইশা আমাদের চারবছরের ভালোবাসার সম্পর্ক এবং দেড় বছরের সংসার ভেঙ্গে দিয়ে হলদে ভাবের কাগজে প্রিন্ট করা ডিভোর্স পেপারে সই করেছিলো।  সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম এবং ইশার নিকট হাত জোড় করেছিলাম,  যেনো সে আমাকে ছেড়ে না যায়। কিন্তু সেদিনকার আমার কান্নাগুলো ছিলো তার নিকট মূল্যহীন,  রুক্ষহস্তে ডিভোর্স পেপারে সই দিয়ে ইতি ঘটিয়েছিল আমাদের সম্পর্কের।  সেদিন বেকারত্ব কেড়ে নিয়েছিলো আমাদের ভালোবাসা।  বেকার ছিলাম আমি,  ইশা বড়লোক বাবার মেয়ে।  আমার সাথে দেড়বছর কাটিয়েছে যে, তা ভাগ্যই বলা যায়, সোনার চামচ মুখে নিয়ে বড় হওয়া মেয়েটি নুন আর পান্তা খেয়ে কদিন'ই বা কাটাবে..? ভালোবাসার জোরে দেড়বছর তারপর  ডিভোর্স।  ডিভোর্স পেপারে সই করেছিলাম বাধ্য হয়েই যদিও ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির সুখ বলেই কথা, তার সুখের কথা চিন্তা করেই ডিভোর্স পেপারে সই করা। সেদিন এর পর আজই হঠাৎ   দুজনের দেখা, হারানো দিনগুলো থেকে বেরিয়ে তার কথার উত্তর দিয়ে বললাম .....

- ভালো, তুমি কেমন আছো...?
- ভালোই,  একা কেনো... বউ বাচ্চা-কাচ্চা কই...?
- বাদ দাও,  ওসব।  তোমার কি খবর,  কেমন চলছে দিনকাল ..?
- চলছে ভালোই,  বিয়ে করোনি তুমি...?
- কোথায যাচ্ছো তুমি..?
- আচ্ছা,  তুমি আমার প্রশ্ন এড়াচ্ছো ক্যান..?
- কখন...?
- এইযে বিয়ের প্রসঙ্গ তুললেই এড়িয়ে যাচ্ছো ক্যান..?
- এমনিতেই।
- তার মানে বিয়ে করোনি তুমি..?
- সরি,
- বিয়ে করোনি কেনো...? আর কেনোই বা নিজেকে  এমন কষ্ট দিচ্ছো...?
- তোমার ক্যাম্পাসের সময়গুলো মনে পড়ে..? আমাদের প্রথম দেখা,  ভালোলাগা, ভালোবাসা, নিভৃতে সময় কাটানো,  দুজন-দুজনারে মন উজাড় করে ভালোবাসা , গ্রীষ্মের আচমকা বৃষ্টিতে একসাথে ভিজা, গ্যাজুয়েশন এর পূর্বেই পালিয়ে বিয়ে করা, দুজন-দুজনের কাছে আসা,  রাতের আকাশে ব্যালকনিতে তোমার কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্র তারার খেলা দেখা।  তারপর আমার গ্যাজুয়েশন শেষ হওয়া, চাকরি পেতে লেট হওয়া, একটু -আদটু ঝগড়া বিধা,  ক্রমান্বয়ে তোমার   দূরে সরে যাওয়া, সর্বশেষ ডিভোর্স পেপারে তোমার সই করা, নিমিষেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আমাদের বহুদিনকার সম্পর্ক এভাবে ভেঙ্গে যাওয়া, এখনো ভুলতে পারিনি।  
ওহ সরি, এসব কেনোই বা বললাম।  একা কোথায় যাচ্ছো এখন, হাসব্যান্ড কোথায়...?
- যাচ্ছি কক্সবাজারে ,সমুদ্রের নীলে নিজেকে হারাবো বলে।  আচ্ছা এখন আর চাঁদ দেখা হয় তোমার...? আর কবিতাগুলো লিখা হচ্ছে কাকে নিয়ে ..? শুনলাম চারটি বইও নাকি বেরিয়েছে ..?
- ওহ ভালোই , আমিও কক্সবাজার যাচ্ছি,  অফিসিয়াল ট্যুরে।
চাঁদ এখনো দেখা হয় তবে একটু ভিন্নভাবে, বছর তিনেক আগে চাঁদ দেখতাম মেয়েলি কাঁধে মাথা রেখে আর চুলের গন্ধ শূঁকে,  আর এখন দেখা হয় বারান্দার ইটের দালানে হেলান দিয়ে নিকোটিনের পোড়া গন্ধ শূঁকে।  যখন নিকোটিনের ধোঁয়ার মাঝে মিশে যাই, তখন মনে হয় তুমি পাশেই আছো, আর তোমার কাঁধেতে মাথা রেখে চাঁদ দেখা হচ্ছে।
- তুমি সিগারেট খাচ্ছো...?
- আমার নিসঙ্গতার পার্টনার সিগারেট, মানুষ ছেড়ে গেলেও তা কখনো ছেড়ে যাবে না,  আমি'ই বা তাকে ছাড়ি কি করে..?
- তুমি বিয়ে করোনি কেনো...?
- মানুষের মনে ভালোবাসা একবার'ই সৃষ্টি হয়,  যখন মন অন্যকাউকে দিয়ে দেওয়া হয় তা আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না,  আমার মন তো সে কবেই দেওয়া হয়ে গেছে,  আমি অন্য কাউকে ভালোবাসবো কি করে...?
আচ্ছা, তোমার হাসব্যান্ড কোথায়, কি করে, নিশ্চয়ই আমার তুলনায় অনেক হ্যান্ডসাম ...?
- আমি ও বিয়ে করিনি
- তুমি বিয়ে করোনি..!
- নাহ
- কিন্তু কেনো...?
- ডিভোর্স পেপারে সই দেওয়ার পর থেকেই আমি আর ভালো  থাকতে পারিনি, সর্বদা তোমার অভাব আমাকে দংশন করে যেতো,  আমি বুঝতে পারি আমার ভালোবাসার গভীরতা। আমি তোমার  নিকট ফিরে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে পথ তো আর আমি খোলা রাখিনি,  কিভাবে আসবো তোমার সম্মুখে , তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাকী জীবনটা একাকী কাটিয়ে দিবো।
- আরেকটি বার সুযোগ দিবে তোমার কাঁধে মাথা রেখে দূরের আকাশে চন্দ্র দেখার....?
- কি বললে ...? আবার বলোতো আমি শুনিনি।
- আরেকটি বার সুযোগ দিবে তোমার কাঁধে মাথা রেখে দূরের আকাশে চন্দ্র দেখার..?
- তুমি ক্ষমা করে দিয়েছো আমায়...?
- আরে বোকা ভালোবাসার মানুষের সাথে কি রাগ করে থাকা যায়, অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
- কিন্তু, আমার শর্ত আছে
- আবার কি শর্ত ...?
- তুমি সিগারেট খেতে পারবে না,  ছেড়ে দিতে হবে।
- আচ্ছা ছেড়ে দিবো, তোমার ঠোটের আলতো ছোঁয়ায় মিশে আছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেশা, নিকোটিনের প্রয়োজন হবে না, তোমার ঠোট জোড়াই আমার নিকোটিন।
- হইছে, আর বলতে হবে না। আমার কিন্তু আরও শর্ত আছে,
- আরও শর্ত...?
- হুঁ, প্রতিদিন ভোরে আমাকে একটি করে সাদা গোলাপ দিতে হবে।
- সাদা গোলাপ...?
- হুঁ
- সবাই তো লাল গোলাপ চায়,  তুমি সাদা গোলাপ চাইছো কেনো..?
- কি... ? তোমার নিকট কোন মেয়ে গোলাপ চাইছে ...? চোঁখ দুটো উপড়ে ফেলবো কিন্তু,  কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না।
- আরে বাবা..., আমার নিকট চাইবে কেনো..?
- দিবে তো প্রতি প্রত্যুষে সাদা গোলাপ...?
- হুমম,
- ভালোবাসি।
আমি গলা ছেড়ে গাইতে লাগলাম ....

বসন্ত বাতাসে পুরোনো পাতা ঝরে
নব্য অঙ্কুরে ব্যস্ত পৃথিবী রাঙাতে ,
রাঙিত পৃথিবীতে, রঙিন ঝলকে
সাদা গোলাপের শুভ্রতা নিয়ে
তুমি আবার এসেছো ফিরে
আমার পৃথিবী সাজাতে
আমি ভালোবাসি তোমারে .........

- প্রত্যাবর্তন
#চাইরচোখ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চিরকুট

মায়া ( ছোট গল্প )